গণতন্ত্রের অভিমুখে
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
গণতন্ত্রের কথা সবাই বলেন, গণতন্ত্রের দাবিও প্রায় সর্বজনীন। তবে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা সবসময়ে যে পরিষ্কার থাকে তা নয়। আসলে গণতন্ত্র হচ্ছে তেমন এক ব্যবস্থা যেখানে সদস্যদের ভেতর থাকবে অধিকার ও সুযোগের সাম্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে এবং ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণটা চলে যাবে যথার্থ জনপ্রতিনিধিদের হাতে। গণতন্ত্রের অভিমুখে এগিয়ে যাওয়াটা সহজ নয়, কিন্তু এগিয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে এই জন্য যে সর্বত্রই এখন অগণতান্ত্রিকতার রাজত্ব। গণতন্ত্রের দিকে যেতে হলে আন্দোলন চাই, এবং আন্দোলনের জন্য সংগঠন দরকার । এসব কথাই এই বইয়ের প্রবন্ধগুলোতে বিভিন্নভাবে এসেছে । গণতন্ত্র যে কেবল ভোট নয়, যদিও গণতন্ত্রের জন্য ভোট দরকার, এই সত্যটাও ভুললে চলবে না ।
মুখবন্ধ
বাংলাদেশে এখন আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি। বুর্জোয়া ধরনের গণতন্ত্র পেলেও আপাতত চলবে, বলছি আমরা । তার চেয়ে বেশী আশা করে লাভ নেই, আসে যদি আসবে ধাপে ধাপে। কিন্তু তাও আসে না। বুর্জোয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পতনের স্তরে রয়েছে, এমনকি নির্বাচনও। নির্বাচন হবে কি হবে না, হলেও তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা যদি পায়ও তবু কত দিন টিকে থাকবে মধ্যবর্তী অভ্যুত্থানের পূর্বে—এসবই প্রশ্ন বটে, তবে কোনো একটি সরকার নির্বাচনের পথ ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেই যে দেশে গণতন্ত্র এসে যাবে এমনও বলবার উপায় নেই। কেননা গণতন্ত্র হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার, এবং সেই অধিকার প্রয়োগ করে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। অর্থাৎ উন্নত জীবন সম্ভব করে তোলা। সে ব্যবস্থা আসবে না যদি গোটা ব্যবস্থা না বদলায়। এমনকি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের আশাও ক্ষীণ, খবরে দেশে নদীর মতো গণতন্ত্র না আসার পথে প্রতিবন্ধক এক নয়, অনেক কিছু তাদের সাধারণ হয়তো। যা বলা যাবে সর্বজনীন, আর কিছু স্থানীয়, বাংলাদেশের নিজস্ব । মুক্ত ঘটনা অবশ্য একই, বহুর সঙ্গে অল্পের স্বার্থগত বিরোধ। প্রতিবন্ধকগুলোতে কয়েকটির ওপর আলোকপাত এবং সেই সঙ্গে গণতন্ত্রের অভিমুখে পদক্ষেপের ক্ষেত্রে আমাদের নিজের অর্জনগুলো রয়েছে তাদের চিহ্নিত করাই এসবের উদ্দেশ্য। সে সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে বেরিয়ে এসেছে সেটি এই যে, গণতন্ত্রের লড়াই আর সমাজতন্ত্রের লড়াই ভিন্ন ভিন্ন নয়। শেষ পর্যন্ত একই তারা, অভিন্ন ।
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
প্রকাশকঃ কথাপ্রকাশ, ঢাকা
মূল্যঃ ৳ ২০০.০০
0 Comments