নীলুফার ইয়াসমীন, তোমায় মনে পড়ে
কণ্ঠশিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন
সম্পাদক
গীতালি হাসান
ভূমিকা
আমাদের দেশে সংগীতসাধনায় যাঁরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নীলুফার ইয়াসমীন তাঁদেরই একজন। যাঁদের গানে একইসঙ্গে অনুভূতিময়তা ও প্রজ্ঞার ছাপ সুস্পষ্ট তাঁদের মধ্যে নীলুফার ইয়াসমীন অন্যতম। নজরুলসংগীত-পরিবেশনে নীলুফার ইয়াসমীন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বলীয়মান। স্বতন্ত্র এ-কারণে যে, তাঁর গানে জীবনোপলব্ধির প্রগাঢ় ছাপ রয়েছে । এ ছাপ তাঁর গাওয়া সব ধরনের গানেই পাওয়া যায় । তিনি মূলত নজরুলসংগীতের শিল্পী হলেও রজনীকান্তের গান, ডি এল রায়ের গান, রাগ সংগীত, আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান – ইত্যাদি অনেক ধরনের গানই করেছেন। বিশেষ করে কীর্তনের পরিবেশনায় তাঁর কণ্ঠের অনবদ্য রূপ সকলের কাছে সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশের যে স্বল্পসংখ্যক শিল্পী কীর্তনের সত্যিকারের ভক্তিরূপকে বজায় রেখে আধুনিক মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পেরেছেন নীলুফার ইয়াসমীন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।
নীলুফার ইয়াসমীনের কণ্ঠের মাধুর্য ও স্বকীয়তা তাঁকে অন্যান্য সংগীতশিল্পী থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল করেছে। পরিবেশনার দিক থেকে সব ধরনের গানেই তিনি তাঁর নিজস্বতা বা স্বকীয়তার ছাপ রেখেছেন ।
২০০৩ সালের ১০ মার্চ এ গুণী শিল্পী আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন । তখন থেকেই নীলুফার ইয়াসমীন স্মরণে কিছু করার প্রবল তাগিদ বোধ করছিলাম । এমন একজন অনুসরণীয় সংগীতশিল্পীর সামগ্রিক কর্মকাণ্ড, অনুশীলন, সংগীত জগতে তাঁর অবদান — এসব ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নীলুফার ইয়াসমীনের মৃত্যুর পর এতোগুলো বছর পার হয়ে গেল; সংগীতজগতে তাঁর অবদানকে মূল্যায়ন করে কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি । আমার উপলব্ধি, এমন অনুসরণীয় সংগীতব্যক্তিত্বের কর্মকাণ্ড ও সাধনার মূল্যায়ন প্রয়োজন, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীরা তাঁর সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে অনুসরণের প্রয়াস পান। সে-তাগিদ থেকেই আমি এ-উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
আমার এ-উদ্যোগ হয়তো আলোর মুখ দেখত না, যদি বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এগিয়ে না আসত। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শিল্প-সংস্কৃতির নানান ক্ষেত্রে সব সময়ে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে সুস্থধারার সাংস্কৃতিক বিকাশে ইতোমধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নান্দনিকতার ছাপ রেখেছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শিল্পীদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ এবারই প্রথম নয়। নীলুফার ইয়াসমীনের স্মরণে গ্রন্থপ্রকাশ সেই ধারাবাহিকতারই অনুবর্তী । আমার সম্পাদনায় এ-গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব নেবার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
যাঁরা লেখা দিয়ে বা স্মৃতিচারণ করে এ-গ্রন্থকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদেরও জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই নীলুফার ইয়াসমীনের সেজো বোন নাজমা ইয়াসমীন হককে। তিনি সর্বক্ষণ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন । নীলুফার ইয়াসমীনের পুত্র আগুন ও বোন নাজমা ইয়াসমীন হক দুর্লভ ছবি জোগাড় করে দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতাভাজন করেছেন ।
বইটির সুন্দর প্রচ্ছদ করে দেয়ার জন্য শিল্পী শাহজাহান আহমদ বিকাশের প্রতি রইল আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
পরিশেষে, সংকলনটি প্রকাশনার ক্ষেত্রে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য লুভা নাহিদ চৌধুরীকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সম্পাদক
প্রকাশকাল
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০
দাম : ১৮০ টাকা
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন
0 Comments