গবেষকের মস্তিষ্ক, কল্পনাপ্রবণ মন অনেক দেশকে লেখক উম্বর্তো একোর অতিরঞ্জিত কাহিনী থেকে বাইরে আনয়ন করে ইতিবৃত্তিক দিকে নিয়ে গেছেন।
ধর্মের প্রশ্নের প্রতিউত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুতগামী হল মানবমন। এই মনের উপর নির্ভর করেই মানব কল্পনা বিচিত্র পথ অতিক্রম করে। এবং অসম্ভাব্যও হয়ে উঠে। নদীর পারের দুঃখভরা জীবন ত্যাগ করে অপর পারের সমস্ত সুখ নিয়ে কোন আদর্শ স্থানের অনুসন্ধান চিরদিন ধরে মানবমনের প্রিয়। এই চিরন্তন সুখভূমির ধারণা করেই আমরা স্বর্গের কথা ভাবি। সাথে নরকের কথাও ভাবি, তবে বিপরীতের অবিদ্যমানতায় কখনও সুখ সম্পূর্ণ হয়েছে? সেই দেশে আমরা কল্পনা করেছি বিলাসবহুল জীবনের পাশাপাশি অতীতের কোন ঐশ্বর্যও।
প্রাচীনকাল থেকে লেখকদের কল্পনাপ্রবণ কলমে এমন অনেক দেশের বর্ণনা উঠে এসেছে বারবার। এসব ভূমি বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সামষ্টিক চেতনায় সচেতন থাকলেও, বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব ছিল কি না তা নিয়ে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর গল্প রচিত হয়েছে। সম্প্রতি লেখা কয়েকটি থ্রিলারের বিষয়বস্তুতে এই ধারণাটি প্রকট হয়েছে এবং পাঠকের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।
উম্বর্তো একোর 'দ্য বুক অফ লেজেন্ডারি ল্যান্ডস'-এ এই রোমাঞ্চকর থ্রিলারের অভাব নেই, যদি গবেষকের মস্তিষ্ক এবং কল্পনাশীল মনকে সংযুক্ত করা যায়। আশ্চর্যের বিষয় যে, কীভাবে অত্যন্ত সাধারণ বা অল্প ঘটনা থেকে কিংবদন্তি উদ্ভব হয়। স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলে সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে উঠে! আবার বুঝতে না চাইলে কল্পনার জাল বুনা সহজ।
প্রাচীনকাল থেকে লেখকদের কল্পনাপ্রবণ কলমে অনেক দেশের বর্ণনা উঠে এসেছে বারবার। এসব দেশ বিভিন্ন জাতির মানুষের চেতনায় সচেতন হলেও, তাদের বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে নানা রোমাঞ্চকর গল্প রচিত হয়েছে। উম্বর্তো একো এই বইতে যুক্তি ও কল্পনার তুলনা করে এসেছেন বিভিন্ন দেশের ইতিকথার দিকে। তিনি শুধু নিজস্ব ব্যাখ্যা দেননি, যুক্ত করেছেন বিভিন্ন লেখকের লেখা। এতে সাহিত্য, ইতিহাস এবং থ্রিলারের স্বাদ রয়েছে। ছবিও রয়েছে প্রচুর। একটি উদাহরণ হল আটলান্টিস। একো প্লেটো থেকে শুরু করে বিভিন্ন লেখকের মতামত তুলে ধরেছেন এ কল্পিত দেশ সম্পর্কে। তিনি নিজে সেটার বাস্তবতা নিয়ে কোনও দাবি তোলেননি। তাই বইটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় উভয়ের জন্যই প্রাসঙ্গিক। প্রাচীন রহস্যের উঁকিঝুঁকি থেকে যায়, তবু তা বিজ্ঞানের আলোয় পরিষ্কার হয়।
সত্যিই একো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদাহরণ তুলে এনেছেন। বাইবেল, হোমার, পাশ্চাত্য লেখকদের কল্পিত প্রাচ্য, স্বর্গ, ইউটোপিয়া, সলমনের দ্বীপ, পৃথিবীর অন্তরাল, হলি গ্রেলের কল্পিত স্থান এবং রেন-ল্য-শাতো - এসবই তিনি আলোচনায় আনেন। রেন-ল্য-শাতো সম্প্রতি কিংবদন্তিতে পরিণত হলেও একো এটির কোনও গোপন অবস্থানের ইঙ্গিত দেননি। বরং ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে এর রহস্যময় দাবিগুলি প্রমাণহীন করে দেখিয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও কল্পনার মধ্যে সন্তুলন বজায় রাখা।
দ্য বুক অফ লেজেন্ডারি ল্যান্ড্স । উমবের্তো একো
ম্যাকলিওস । লন্ডন
0 Comments