প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথা
পালি ও সংস্কৃত রচনায় যেভাবে চিত্রিত
দেব রাজ চানানা
বইটি সম্পর্কে জানতে হলে পড়ুন।
গোড়ায়, দীর্ঘকাল ধরে ভারতবিদরা ভারতীয় সমাজের পর্যালোচনা করেছিলেন প্রায় একান্তভাবেই তাত্ত্বিক সংস্কৃত রচনাদি, অর্থাৎ ধর্মশাস্ত্র অনুসারে।
আঠেরো শতকের শেষদিকের অধিকাংশ ভারতবিদ যে-সমাজকে প্রত্যক্ষ ভাবে দেখেছিলেন সেটি তাঁদের ঐ সমাজের সুনির্দিষ্ট হিন্দু উপাদান, তার ভিত্তির স্পষ্ট ও নির্ভুল ছবি দিতে পারে নি। অন্তত যে-সব অঞ্চল প্রথম ব্রিটিশ কর্তৃত্বের অধীনে আসে, যেমন বাঙলা, তাদের এই সমাজে কতকগুলি সুস্পষ্ট অ-হিন্দু উপাদান ছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের নামে, বা তার পরে, বিদেশী বা মুসলমান নামে সেই উপাদানগুলি ঐ সমাজের উপর প্রভুত্ব করেছিল । বিশাল ও পৃথক হিন্দু উপাদান অবশ্যই ছিল, কিন্তু তার অভ্যন্তরীণ গড়ন ছিল খুবই জটিল আর বাইরের জগৎ সম্পর্কে তা উপস্থিত করত এক রুদ্ধ দৃষ্টি। এই হিন্দু উপাদানটি ছিল পৃথকভাবে লক্ষণীয় আর তার গুরুত্বও ছিল, কিন্তু তা ছিল বিশ্লেষণের অতীত। যা-ই হোক, নিজের শক্তি সম্পর্কে এই উপাদান ছিল সচেতন; এর ছিল নিজস্ব পরম্পরা, নিজস্ব সাহিত্য, নিজস্ব পণ্ডিতকুল আর নিজস্ব ধ্রুপদী শিক্ষণপদ্ধতি। এর অবস্থা, এর প্রকৃতি, এর উৎসাবলি এবং যে-বিকাশের ধারা এটিকে তখনকার বিদ্যমান অবস্থায় শেষ পর্যন্ত এনেছিল তা পরীক্ষা করা যেত। এই পর্যালোচনা চালিয়ে যাওয়ার দরকারও ছিল, দুটি উদ্দেশে— দেশকে জানা ও তাকে শাসন করা।
বাঙলায় যে মুসলিম প্রশাসন ব্রিটিশ শাসনের পথ করে দিল তার ভাষা ছিল ফারসি। সারা দেশ জুড়ে সাধারণ সংযোগের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ভাষাটি, কারণ যে-সাহিত্যিক মর্যাদা একে গ্রহণযোগ্য করেছিল তাছাড়াও একটি বহুভাষী দেশে সংযোগের মাধ্যম হওয়ার পক্ষে এর ব্যাবহারিক সুবিধাও ছিল। তাহলেও ফারসি ভাষা ভারত সম্পর্কে শুধু ভাসা-ভাসা জ্ঞান দিতে পারত। অচিরেই দেখা গেল ভারতকে যথার্থ বোঝার পক্ষে সংস্কৃত ভাষাই চাবিকাঠি। প্রথমে শুধু পণ্ডিতরাই সে-ভাষায় আগ্রহী হয়েছিলেন। তাই কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাঙলার ব্রিটিশ প্রশাসন অচিরেই সংস্কৃত-র দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করল, সেই ভাষা, আগে যাকে—আঁকেতিল-দুপেরঁ-র চর্চার উপযোগিতা নিয়ে বিবাদের সময়ে—অবজ্ঞার সঙ্গে বিবেচনাযোগ্য বলে মনে করেছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি-র প্রতিষ্ঠাতা, উইলিয়ম জোন্স্।
অতএব, সঠিকভাবেই ও সফলভাবে তাঁদের কলকাতার পণ্ডিতদের শরণ নিতে হলো । তাঁরা তাঁদের প্রধান গ্রন্থগুলির নাম ও ব্যাখ্যা দিলেন। আর বহু আগে, ১৭৯৪-এই উইলিয়ম জোন্স্ মনু-র (ইংরিজি) তর্জমা প্রকাশ করলেন। ভারতীয় সমাজের উদ্ঘাটন বলে তৎক্ষণাৎ এটি ইওরোপে স্বাগত হলো, জার্মান ভাষায় পুনরনূদিত হলো ১৭৯৭-এ। কোলব্রুক-এর ‘হিন্দু আইনের সারসংগ্রহ' (ডাইজেস্ট অফ হিন্দু ল) বেরল ১৮০১-এ। সংস্কৃত-য় লেখা হিন্দু আইন বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থই ছিল এর ভিত্তি। তারপর থেকে ভারতীয় সমাজ সংক্রান্ত তথ্যের জন্যে, ইওরোপে, লোকে সবার ওপরে মনুর কাছেই যেত, কারণ ধরে নেওয়া হয়েছিল ঐ সংহিতাটি ভারতীয় সমাজের উৎপত্তির দিকে ফিরে গেছে। আরও একটি কারণ হলো: এটি তখনও বলবৎ ছিল। প্রাচীন অতীত থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত এই সংহিতাটি ভারতে জীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে, সুতরাং এটি ভারতীয় জীবনের যথার্থ বিধির সূচক। মনু ও তাঁর সংশ্লিষ্ট রচনাদিতেই ভারতীয় সভ্যতার সবচেয়ে খাঁটি ও নির্দিষ্ট তথ্য এবং ভারতের জীবনযাত্রার অবস্থার কথা পাওয়া যাবে।
মনু যে-আগ্রহ জাগিয়েছিলেন তা খুবই ন্যায্য এবং ‘ধর্ম’, সুবিন্যাস সংক্রান্ত বিশাল সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সাহিত্য ভারতে ও ভারতীয় প্রভাবাধীন দেশগুলিতে জনসাধারণের জীবনের ওপর তার শক্তিশালী ও ধারাবাহিক ঐতিহ্য দিয়ে বাস্তবিকই প্রভুত্ব করেছে। কিন্তু জীবনের ওপর প্রভুত্ব করা ও তার বিবরণ দেওয়া এক জিনিস নয়। ধর্মশাস্ত্র-সাহিত্য একটি সতত অনুসৃত সরকারি আদর্শ বর্ণনা করে। কিন্তু সকলেই, সর্বদাই তা অনুসরণ করে নি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এই বাস্তবকে তার বর্তমান রূপে সরাসরি লক্ষ্য করা যায়, আর তার অতীত রূপগুলি উদ্ঘাটিত হয় সাহিত্যে পাওয়া নানা উল্লেখ থেকে।
এদিক দিয়ে তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস হলো প্রাচীন বৌদ্ধ রচনাদি, সংস্কৃত মহাকাব্য ও কথামালা। সমাজের বর্ণনা দেওয়া ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্য থাকায় এই সব রচনায় অভিপ্রায় ছাড়াই সমাজের কথা বলা থাকে প্রসঙ্গত, এবং এমন রূপে যা লেখককুল ও সাধারণ মানুষের জানা। সম্পাদনার পর্বটি যখন জানা যায় তখন সেখানে পাওয়া উল্লেখগুলি তাদের কাল-বিষয়ক ঐতিহাসিক সাক্ষ্যের মূল্য পায়। এইসব রচনা তাই তাদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাব ও একটি বিশেষ যুগের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কারণে তাত্ত্বিক শিক্ষাবলির স্থান নিতে পারে, যেগুলিকে স্থানে-কালে নির্দিষ্টভাবে স্থাপন করা যায় না। এগুলি পুরোপুরি কাল্পনিক নয়, কারণ একদিকে এরা বিদ্যমান অবস্থার (যখন এদের নীতিগুলি প্রথম ধারণ করা হয়েছিল) ওপর অংশত প্রতিষ্ঠিত, এবং অন্যদিকে এদের প্রায়শই ফলপ্রসূভাবে ব্যবহারে আরোপ করা হয়েছিল। সংস্কারের সম্ভাব্য অভিপ্রায় থাকায় এগুলি বর্ণনামূলক দলিলের প্রকৃতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি যখন তারা পুরোপুরি এই প্রকৃতির, তখনও তাদের মূল্য কমে যায়, কারণ ঠিক কোন্ যুগে সেগুলি লেখা হয়েছিল ও কোন্ যুগের প্রথা সেগুলিতে লিপিবদ্ধ আছে তা অনিশ্চিত। শেষত তাদের প্রয়োগের পরিধি ও স্থান-কাল স্থির করার বিষয়ে অনিশ্চয়তা আছে। সামাজিক ঘটনাবলির ইতিহাসে এবং অতএব, সঠিকভাবেই ও সফলভাবে তাঁদের কলকাতার পণ্ডিতদের শরণ নিতে হলো । তাঁরা তাঁদের প্রধান গ্রন্থগুলির নাম ও ব্যাখ্যা দিলেন। আর বহু আগে, ১৭৯৪-এই উইলিয়ম জোন্স্ মনু-র (ইংরিজি) তর্জমা প্রকাশ করলেন। ভারতীয় সমাজের উদ্ঘাটন বলে তৎক্ষণাৎ এটি ইওরোপে স্বাগত হলো, জার্মান ভাষায় পুনরনূদিত হলো ১৭৯৭-এ। কোলব্রুক-এর ‘হিন্দু আইনের সারসংগ্রহ' (ডাইজেস্ট অফ হিন্দু ল) বেরল ১৮০১-এ। সংস্কৃত-য় লেখা হিন্দু আইন বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থই ছিল এর ভিত্তি। তারপর থেকে ভারতীয় সমাজ সংক্রান্ত তথ্যের জন্যে, ইওরোপে, লোকে সবার ওপরে মনুর কাছেই যেত, কারণ ধরে নেওয়া হয়েছিল ঐ সংহিতাটি ভারতীয় সমাজের উৎপত্তির দিকে ফিরে গেছে। আরও একটি কারণ হলো: এটি তখনও বলবৎ ছিল। প্রাচীন অতীত থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত এই সংহিতাটি ভারতে জীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে, সুতরাং এটি ভারতীয় জীবনের যথার্থ বিধির সূচক। মনু ও তাঁর সংশ্লিষ্ট রচনাদিতেই ভারতীয় সভ্যতার সবচেয়ে খাঁটি ও নির্দিষ্ট তথ্য এবং ভারতের জীবনযাত্রার অবস্থার কথা পাওয়া যাবে।
মনু যে-আগ্রহ জাগিয়েছিলেন তা খুবই ন্যায্য এবং ‘ধর্ম’, সুবিন্যাস সংক্রান্ত বিশাল সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সাহিত্য ভারতে ও ভারতীয় প্রভাবাধীন দেশগুলিতে জনসাধারণের জীবনের ওপর তার শক্তিশালী ও ধারাবাহিক ঐতিহ্য দিয়ে বাস্তবিকই প্রভুত্ব করেছে। কিন্তু জীবনের ওপর প্রভুত্ব করা ও তার বিবরণ দেওয়া এক জিনিস নয়। ধর্মশাস্ত্র-সাহিত্য একটি সতত অনুসৃত সরকারি আদর্শ বর্ণনা করে। কিন্তু সকলেই, সর্বদাই তা অনুসরণ করে নি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এই বাস্তবকে তার বর্তমান রূপে সরাসরি লক্ষ্য করা যায়, আর তার অতীত রূপগুলি উদ্ঘাটিত হয় সাহিত্যে পাওয়া নানা উল্লেখ থেকে।
এদিক দিয়ে তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস হলো প্রাচীন বৌদ্ধ রচনাদি, সংস্কৃত মহাকাব্য ও কথামালা। সমাজের বর্ণনা দেওয়া ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্য থাকায় এই সব রচনায় অভিপ্রায় ছাড়াই সমাজের কথা বলা থাকে প্রসঙ্গত, এবং এমন রূপে যা লেখককুল ও সাধারণ মানুষের জানা। সম্পাদনার পর্বটি যখন জানা যায় তখন সেখানে পাওয়া উল্লেখগুলি তাদের কাল-বিষয়ক ঐতিহাসিক সাক্ষ্যের মূল্য পায়। এইসব রচনা তাই তাদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাব ও একটি বিশেষ যুগের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কারণে তাত্ত্বিক শিক্ষাবলির স্থান নিতে পারে, যেগুলিকে স্থানে-কালে নির্দিষ্টভাবে স্থাপন করা যায় না। এগুলি পুরোপুরি কাল্পনিক নয়, কারণ একদিকে এরা বিদ্যমান অবস্থার (যখন এদের নীতিগুলি প্রথম ধারণ করা হয়েছিল) ওপর অংশত প্রতিষ্ঠিত, এবং অন্যদিকে এদের প্রায়শই ফলপ্রসূভাবে ব্যবহারে আরোপ করা হয়েছিল। সংস্কারের সম্ভাব্য অভিপ্রায় থাকায় এগুলি বর্ণনামূলক দলিলের প্রকৃতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি যখন তারা পুরোপুরি এই প্রকৃতির, তখনও তাদের মূল্য কমে যায়, কারণ ঠিক কোন্ যুগে সেগুলি লেখা হয়েছিল ও কোন্ যুগের প্রথা সেগুলিতে লিপিবদ্ধ আছে তা অনিশ্চিত। শেষত তাদের প্রয়োগের পরিধি ও স্থান-কাল স্থির করার বিষয়ে অনিশ্চয়তা আছে। সামাজিক ঘটনাবলির ইতিহাসে এবং সেগুলির বিকাশের অবস্থাদির সন্ধানের ক্ষেত্রে তাদের উপযোগিতার জন্যে তুলনার ভিত্তিতে প্রামাণিকতার বিচার করা প্রয়োজন। অন্যান্য সম্প্রদায়ের রচনা থেকে অকস্মাৎ প্রাপ্ত সাক্ষ্যই তা সঠিক ভাবে জোগান দিতে পারে।
এর জন্যেই দৈনন্দিন জীবনে মানুষের বর্ণনা দেয় এমন সব গল্প এত মূল্যবান। সেখানে এই জীবনের নানা রূপ ও দিকের উল্লেখ থাকে। এমনকি পশু-বিষয়ক গল্পগুলিও ব্যবহার করা যায়, যেহেতু যে-কাল্পনিক পশুসমাজকে সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে তা মানবসমাজেরই প্রতিচ্ছবি। অবশ্য 'পঞ্চতন্ত্র', 'হিতোপদেশ' ও অন্যত্র এই ধরণের গল্পকে ধর্মশাস্ত্রগুলির মতোই কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ফেলা কঠিন।
সূত্র জোগানের দিক থেকে ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত' এই দুটি মহাকাব্য উন্নততর। ‘রামায়ণ’ (অধিকতর ঐক্যবদ্ধ গ্রন্থ) রচনার ও ‘মহাভারত’ সঙ্কলনের পর্বগুলি এখনও ঠিকমতো নির্ধারণ করা যায় নি, তবু এদের মৌলিক তথ্যগুলিকে তুলনায় প্রাচীন কোনো যুগে স্থাপন করা যায়। এই পর্বটি অবশ্য ধর্মশাস্ত্র-সাহিত্যের প্রথম উদ্ভবের পরবর্তী। ‘মহাভারত’-এ ধর্মশাস্ত্রকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে : তার প্রাচীনতা এই দিয়েই নিশ্চিত হয়। সবার ওপরে কাহিনীগুলির প্রসঙ্গে মহাকাব্যদুটি আরও অনেক স্বতঃস্ফূর্ত নির্দেশ দেয় যা ধর্মশাস্ত্র থেকে নেওয়া 'মহাভারত'-এর গল্পমালায় পাওয়া যায় না। ফলে এই ইঙ্গিতগুলি তাদের যুগের জীবন্ত বাস্তবের সঙ্গে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। সেগুলি তথ্যবহুল, যে-তথ্য মৌলিক বা অন্য সূত্রে সমর্থিত আর সে-কারণেই আগ্রহের দুটি আলাদা হেতু আছে।
বৌদ্ধ আনুশাসনিক রচনায় পাওয়া তথ্যাবলিও তুলনায় উন্নত। এমনকি যদি পরম্পরাগত তথ্যগুলির বিমূর্তন করা যায় এবং এমনকি একথা না-ও স্বীকার করা হয় যে, এগুলি সঙ্কলিত হয়েছিল রাজগহের সঙ্গীতিতে (বুদ্ধের পরিনির্বাণের ঠিক পরেই অনুষ্ঠিত), পরম্পরা অনুযায়ী যেখানে সেগুলি আবৃত্ত হয়, তাহলেও অন্তত আনুশাসনিক রচনাদির মূল অংশ যে আগেই রূপ পেয়েছিল যে-বিষয়ে একাধিক শক্তিশালী যুক্তি আছে। প্রথমত, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি অশোক ইতোমধ্যেই এগুলির উল্লেখ করেছেন। কিছু পরেই ভরহুত-এর স্থাপত্যে ও নানা প্রত্নলেখে ইতোমধ্যেই বুদ্ধের পূর্বতন জন্ম ও জাতকের পরম্পরাগত কাহিনীগুলির আভাস আছে। সেগুলিতে প্রাচীন ভারতের দৈনন্দিন জীবনের পর্যাপ্ত পরোক্ষ-উল্লেখ পাওয়া যায়। তার ওপর বহু পালি আনুশাসনিক গ্রন্থের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের গ্রন্থের মিল (প্রায়ই এত ঘনিষ্ঠ যে সদৃশ হয়ে দাঁড়ায়) —যেগুলি প্রথম সূত্র থেকে পাওয়া হয় নি বলেই মনে হয়—থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মূলের বেশ নিকট কোনো উৎস থেকে এগুলি পাওয়া গিয়েছিল।
একটি পর্ব ধরে সংস্কৃত-ই আরও বেশি করে ব্যবহার হচ্ছিল সাধারণ সংযোগের ভাষা হিসেবে, আর অধিকাংশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ই ক্রমে আরও নিয়মিতভাবে সংস্কৃত-য় লিখছিলেন। এমনকি তখনও ‘তিপিটক’রক্ষিত হয়েছিল পালিতে, মধ্য-ভারতীয় ভাষায় । এই তথ্যটি একটি প্রাচীন রচনার অনুগত পাঠের পক্ষে যায়।
প্রথম অনুবাদ সংস্করণ: ১৯৯৫
প্রকাশক
কে.পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানী
0 Comments